জীবনে প্রশান্তি ও সৌভাগ্য লাভে যে আমল করবেন



মুসলমানের মূল্যবান ও একমাত্র সম্বল ঈমান। দুনিয়া ও পরকালের সব কিছুর সঙ্গেই মানুষের ঈমান জড়িত। ঈমানবিহীন যে কোনো কাজই আল্লাহর কাছে মূল্যহীন। তাইতো মানুষ জীবনের অন্তিম মুহূর্তে ঈমান নিয়ে হলেও মৃত্যুবরণ করতে চায়। কেননা ঈমানি মৃত্যুতেই রয়েছে চিরকালীন মুক্তি।


ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করা একজন মুমিন মুসলমানের জন্য প্রশান্তি ও সৌভাগ্যের বিষয়। এর অন্যতম উপায় হলো কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক জীবন পরিচালনা করা। বিশেষ করে-


> কুরআন-সুন্নাহর দিক-নির্দেশনা মেনে চলা

আল্লাহ ও তার রাসুলের দেয়া বিধান, হুকুম-আহকামগুলো যথাযথ মেনে চলা। কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক জীবন পরিচালনাই ঈমানি মৃত্যু লাভ ও পরকালের প্রশান্তির জীবন লাভের অন্যতম উপায়। কুরআনের ধারণ বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন-
‘তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না, যখন তোমরা দুটো জিনিসকে আঁকড়ে ধরবে। আর তার একটি হলো আল্লাহর কিতাব আর অন্যটি হলো তার রাসুলের সুন্নাহ।’


> আমলে সালেহ তথা নেক আমলে করা

যে ব্যক্তি যে কাজে নিজের জীবন অতিবাহিত করবে, সে কাজের ওপরই তার মৃত্যু হবে। যদি কেউ কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন-যাপন করে তবে তার মৃত্যুও কুরআন-সুন্নাহর আলোকে হবে। এ কারণেই দুনিয়ার জীবনে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী নেক আমলে জীবন সাজানো।


> সত্যবাদী বা সাদেক্বিনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা

যারা সত্যের ওপর অটল অবিচল। দ্বীন ও ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত। কুরআন-সুন্নাহর প্রতিনিধিত্ব করে, সেসব লোকদের সংস্পর্শ ও কথা মতো জীবন পরিচালনা করাও ঈমানি মৃত্যু লাভের অন্যতম উপায়। আল্লাহ বলেন-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং (তাকে ভয় করার মাধ্যম হিসেবে) সাদেক্বিন বা সত্যবাদীদের সঙ্গে চলাফেরা কর।’


> আল্লাহকে স্মরণ করা

আল্লাহকে স্মরণ করার যত মাধ্যম আছে, সব ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করা। দুনিয়াতে যারা আল্লাহর জিকিরে নিজের জীবন পরিচালনা করে, দুনিয়াতেই তাদের ঈমান বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আর মৃত্যুর সময় তারাও প্রশান্তি সৌভাগ্যের মৃত্যু লাভ করেন। এ কারণেই সাহাবায়ে কেরামের জিজ্ঞাসার জবাবে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘তোমরা তোমাদের ঈমানকে নবায়ন কর। সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, ‘কীভাবে ঈমান নবায়ন করব? হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বললেন, বেশি বেশি- لَا اِلَهَ اِلَّا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’পড়তে থাকা।’


> মেসওয়াক করা

প্রশান্তির মৃত্যু লাভে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় আমল মেসওয়াকও একটি। হাদিসে পাকে বিশ্বনবি তার উম্মতকে এ উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন-
‘আমার উম্মাতের উপর যদি কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে তাদের প্রত্যেক সালাতের সময় মেসওয়াক করার নির্দেশ করতাম।’

ইসলামিক স্কলাররা মেসওয়াকের ২০টি উপকারিতা বর্ণনা করেছেন। সর্বনিম্ন উপকারিতা হলো মুখের ময়লা দূর হওয়া আর সর্বোচ্চ উপকারিতা হলো মৃত্যুর সময় কালেমা নসিব হওয়া।’


> নির্জনে আল্লাহর কাছে ধরনা দেয়া

জীবনের অন্তিম মুহূর্তে ঈমান ও প্রশান্তির মৃত্যুর জন্য আল্লাহর কাছে গোপনে আবেদন-নিবেদন করা। রোনাজারি করা। চোখের পানি ফেলে দোয়া করা। এ জন্য বিশ্বনবি কিছু দোয়া শিখিয়েছেন। আর তাহলো-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ
উচ্চারণ :‘ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আলামু, ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা লা আলামু।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমার জানামতে আপনার প্রতি শিরক হয় এমন ভয়াবহ অপরাধ থেকে বেঁচে থাকার আশ্রয় চাই। আর আমার অজানায় ঘটে যাওয়া শিরক থেকেও ক্ষমা প্রার্থনা করি।

اَللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوْبِ صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা মুছাররিফাল কুলুবি ছাররিফ কুলুবানা আলা ত্বাআতিকা।
অর্থ : হে (মানুষের) অন্তর পরিবর্তনকারী আল্লাহ! আমাদের অন্তরকে আপনার আনুগত্যের দিকে পরিবর্তন করে দিন।’ (মুসলিম, মিশকাত)

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّت قَلْبِىْ عَلَى دِيْنِكَ
উচ্চারণ : ‘ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুবি ছাব্বিত কালবি আলা দিনিকা।’
অর্থ : ‘হে (মানুষের) অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দীনের উপর দৃঢ় রাখ। (তিরমিজি, মিশকাত)

رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আফরিগ আলাইনা সাবরাও ওয়া তাওয়াফ্ফানা মুসলিমিন।’
অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের ধৈর্যদান করুন এবং মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দান করুন।’

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা লা তুযেগ কুলুবানা বাদা ইজ হাদাইতানা ওয়া হাবলানা মিল্লাদুনকা রাহমাতান ইন্নাকা আংতাল ওয়াহহাব।’
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে ধাবিত করো না; এবং তোমার কাছ থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান কর; নিশ্চয় তুমিই সবকিছুর দাতা।’

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْفِتَنِ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল ফিতানি মা জাহারা মিনহা ওয়া মা বাত্বান।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! যে ফেতনাগুলো দেখা যায় আর যেগুলো দেখা যায় না, সব ধরনের ফেতনা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’

সর্বোপরি আল্লাহর কাছে এ ধরনা বেশি দেয়া-

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
উচ্চারণ : ‘ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম। সিরাতাল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম। গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়া লাদ্দাল্লিন।’
অর্থ : ‘আমাদের সহজ সরল পথের হেদায়েত দিন। যে পথে চলা লোকদের ওপর আপনি নেয়ামত দান করেছেন। অভিশপ্ত ও গোমরাহির পথ থেকে বিরত রাখেন।’

আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে প্রশান্তি ও সৌভাগ্যের মৃত্যুদানে কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। ঈমানের ওপর অটল ও অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। সাদেক্বিন-সত্যবাদীদের সঙ্গে চলার এবং সুসম্পর্ক রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।



 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button *