আসুন আমরা আয়াতুল কুরসি শিখি, আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে, আমাদের জন্য কি? ফজিলত আল্লাহ রেখেছেন । কোরআনে বর্ণনা করেছেন, চলুন জেনে নেই, আয়তুল কুরসী কেন শিখবেন। কিভাবে শিখবেন, কি কি ফজিলত ,বিস্তারিত জানুন এবং ভিডিওটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
আয়াতুল কুরসী হচ্ছে কুরআন শরীফের সূরা আল বাকারা ২৫৫ তম আয়াত। এবং এটি হচ্ছে কুরআন শরীফের শ্রেষ্ঠতম আয়াত । এই আয়াত সমূহের মধ্যে মহান আল্লাহ্ তালার এমন কিছু পূর্ণাঙ্গ পরিচিতি পেশ করা হয়েছে যার মতো আর পুরো কুরআন শরীফ এ নেই ।
যার জন্য হাদিস শরীফ আয়াতুল কুরসী ( Ayatul Kursi Bangla ) কে কুরআন শরীফের শ্রেষ্ঠ আয়াত বলে অভিহিত করেছে। আর এই জন্য আমরা প্রতি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি বেশি বার পাঠ করে থাকি।
আয়াতুল কুরসী বাংলা উচ্চারনঃ
আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল-কাইয়্যুল, লা-তা’ খুযুহু সিনাতু ওয়া-লা নাউম । লাহু মা-ফীস সামাওয়াতি ওয়া-মা ফীল আরদি। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ ইনদাহু ইল্লা-বি-ইযনিহী, ইয়া’লামু মা- বাইনা আইদীহীম ওয়া-মা খলফাহুম, ওয়া-লা ইউহীতূনা বিশাইয়্যিম মিন ইলমিহী ইল্লা বিমা শা-আ। ওয়াসি’আ কুরসীয়্যুহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়া-লা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুয়াল আলীয়্যুল আযী-ম। (সূরা আল বাকারাহ- ২৫৫ তম আয়াত)
আয়াতুল কুরসী বাংলা অর্থঃ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, আল্লাহ্ জীবিত,তিনি সবকিছুর ধারক। তাকে নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না এবং তন্দ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই কিছুর মালিক তিনি ।
কে আছো এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই কিছুই আল্লাহ্ জানেন।
তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত নভোমন্ডল ভূমন্ডল পরিবেষ্টিত করে আছে।
আর এইগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। আল্লাহই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। ( সূরা আল বাকারাহ- ২৫৫ তম আয়াত)
আয়াতুল কুরসীর আটটি গুনঃ
আল্লাহ তা-আলা এই আয়াতের মধ্যে আটটি গুনের কথা বলা বলেছেন। প্রথম গুনটি হচ্ছেঃ
আল্লাহ এক অদ্বিতীয় তিনি চিরস্থায়ী তিনি চিরঞ্জীবী আল্লাহ তা-আলা একজন। তার কোন শরীক নেই। আল্লাহর কোন অংশীদার নেই। তার মত বা তার কোন সমকক্ষওকেউ নেই। তিনি চিরস্থায়ী। তার নিজ সিংহাসন হতে আসমান জমিন নভোমন্ডল ভূমন্ডল সবকিছু তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি চিরঞ্জীবী তিনি যেমন আছেন তিনি তেমনি থাকবেন এবং আল্লাহর কখনোই মৃত্যু হবে না।
দ্বিতীয় গুণঃ
আল্লাহ তা-আলার কখনো ঘুম আসে না এবং তন্দ্রা আল্লাহ তালাকে স্পর্শ করেনা।
তূতীয় গুনঃ
আসমান জমিনে যারা আছে তারা সবিই আল্লাহ্র প্রশ্নংসা করেন।
চতুর্থ গুনঃ
আল্লাহ্ তা-আলা বলেন এমন কে আছো আমার অনুমতি ছাড়া আমার কাছে সুপারিশ করতে পারে? সকল সাফায়াতের চাবিকাঠি আল্লাহর হাতে ।আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া আল্লাহর কাছে কেউই সুপারিশ করতে পারবে না।
পঞ্চম গুনঃ
আল্লাহ্ তালা সব কিছুই জানে । তিনি অন্তর জামি। এই পুরো নভোমন্ডল ভূমন্ডলে যত কিছু ঘটছে বা ঘটবে তিনি সব কিছুই জানেন।
ষষ্ঠ গুনঃ
আল্লাহ্ তা-আলা জ্ঞানের আধার। আল্লাহ্ তা-আলা যতোটুক ছেয়েছে আমাদেরকে ততো টুক জ্ঞান দান করেছেন। এর বেশি একটুক ও দেন নি।
সপ্তম গুনঃ
আল্লাহ্ তা-আলা নভোমন্ডল ভূমন্ডল সূষ্টি করেছেন আর আমরা এর ভিতরে বসবাস করেছি । আল্লাহ্ তা-লার কুরসীর মধ্যেই আমরা বসবা করছি আমরা চাইলেও এর বাহিরে যেতে পারবনা আর এই কথা মেনেই আমাদের বাঁচতে হবে।
অষ্টম গুনঃ
আর এই সব কিছু করতে আল্লাহ্ তা-আলা কখনো ক্লান্ত হন না। আল্লাহর কোন অবসাদ নেই । আর সব কিছুই মানলে আমাদের উপর আল্লাহ্ তা-আলা খুশি হবেন। আর আমাদের পক্ষে জান্নাত লাভ করা সহজ হবে।
এ ছাড়া আয়াতুল কুরসী পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাদের অনেক অনেক ফজিলত লাভ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তা-আলা মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এমন এমন অনেক আয়াত মানবজাতির জন্য বিশেষত্ব দিয়েছেন যা আমল করে অনেক ফজিলত লাভ করা সম্ভব। আর সেই সব গুলো আয়াতের মধ্যে আয়াতুল কুরছি শ্রেষ্ঠতম। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রতিদিন ফরজ নামাজ পড়ার পর আয়াতুল কুরছি পাঠ করবে তার মৃত্যুর সময় সহজভাবে জান কবজ করা হবে।
অন্য আরেক বর্ণনায় পাওয়া যায় যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতে যেতে আর কোনো বাধাই থাকবে না কেবলমাত্র মৃত্যু ছাড়া অর্থাৎ মৃত্যু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর জান্নাতের শান্তি উপভোগ করতে পারবে(সুবহানাল্লাহ)।
আরে থেকে বোঝা যায় আল্লাহ তাআলা কত মহান আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য নানারকম সুযোগ দিয়েছেন যেন তার বান্দা আল্লাহ তা-আলার ইবাদতে মশগুল থেকে খুব সহজভাবে জান্নাত লাভ করতে পারে।
আল্লাহ তালা দুনিয়াতে যে এই আয়াতের এতো ফজিলত দিয়েছেন যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসী পাঠ করে গুমায় তাহলে আল্লাহ তা-আলা তার মাথার কাছে এমন একজন ফেরেস্তা পাহারা দেওয়ার জন্য নিযুক্ত করে দেন যে ফেরেস্তা সারা রাত তাকে পাহারা দেয় এবং সকল রকম অনিষ্ট থেকে তাকে হেফাজত করে।
আয়াতুল কুরসী পাঠ করলে আল্লাহ্ জ্বিন শয়তান এবং সকল রকম অনিষ্ট হতে রক্ষা করেঃ
হাদিসে পাওয়া যায় যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসী প্রতিদিন সন্ধায় পড়বে সে সকাল পযন্ত জ্বিন এবং শয়তান থেকে হেফাজতে থাকবে। আবার যে যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসী প্রতিদিন সকালে পড়বে সে সন্ধা পযন্ত জ্বিন এবং শয়তান থেকে হেফাজতে থাকবে।
এই সময়ের মধ্যে খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে জ্বিন এবং শয়তান তার কোন অনিষ্ট করতে পারে না। এবং হযরত মুহাম্মাদ (স.) বলছেন আয়াতুল কুরসী পাঠকরে মাল- সম্পদ ফুক দিয়ে ঘুমায় তাহলে তার ওই সম্পদের কোন ক্ষতি হয় না। চোর সেই সম্পদ চুরি করতে পারে না।
এছাড়াও এই আয়াতুল কুরসী যে ব্যক্তি সব সময় পাঠ করবে আল্লাহ তা-আলা তার জন্য আটটি জান্নাতের সব গুলো দরজা দিয়ে প্রবেশ করার সুযোগ দিবেন।(আলহামদুলিল্লাহ)
আর তাই আমাদের সকলের উচিত বেশি বেশি আয়াতুল কুরসী পড়া।আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া যেন আল্লাহ্ তা-আলা আমাদের সকল গুনাহ মাপ করেন।